ইতালিতে পাঠানোর নামে ৩৮ জনের কাছ থেকে প্রায় ৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ, বেলারুশে আটকে রেখে রাশিয়ার সেনা ক্যাম্পে বিক্রি করে দেওয়ার মতো ভয়াবহ প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে একটি মানব পাচার চক্রের বিরুদ্ধে। এই চক্রের মূল হোতা নাজমুল খান ও নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার এবং আত্মসাৎ করা অর্থ উদ্ধারের দাবিতে ঝিনাইদহে এক মর্মস্পর্শী সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম।
গতকাল (২২ জুলাই) দুপুরে ঝিনাইদহ শহরের বাংলাদেশ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এই সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সদর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের রোজদার আলীর ছেলে রবিউল। বক্তব্যে তিনি তার সর্বস্ব হারানোর করুণ কাহিনী তুলে ধরেন।
প্রতারণার ফাঁদে সর্বস্বান্ত রবিউল
রবিউল ইসলাম জানান, মাগুরা জেলার রাউতাড়া গ্রামের আছাদ মোল্লার ছেলে নাজমুল খান এবং তার বোনজামাই ঝিনাইদহের ইসলামপুর পুটিয়া গ্রামের হোসেন বিশ্বাসের ছেলে নজরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ইতালি প্রবাসী হওয়ার সুযোগে এক বিশাল প্রতারণার জাল বিছিয়েছেন। এই চক্রটি ঝিনাইদহ-মাগুরাসহ সারা দেশে মানব পাচারের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। নাজমুলের বাবা আছাদ মোল্লা, মা শাহিদা বেগম এবং ছোট ভাই নূর ইসলাম এজেন্ট হিসেবে টাকা সংগ্রহের কাজ করে।
রবিউল বলেন, “চার মাসের মধ্যে ইতালি পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০২৩ সালের ১৩ জুন আমার কাছ থেকে ২২ লক্ষ টাকা নেয় নাজমুল চক্র। এরপর চলতি বছরের জুন মাসে আমাকে ঢাকায় ডেকে নেয়। সেখানে ৩৬ দিন আমি নিজের খরচে একটি আবাসিক হোটেলে থাকি। এই সময়ে তিনবার আমাকে বিমানের ভুয়া টিকিট দিয়ে এয়ারপোর্টে পাঠানো হয় এবং প্রতিবারই চরম অপমানিত হয়ে ফিরে আসি।”
তিনি আরও বলেন, “এরপর আমাকে প্রতারণা করে সৌদি আরবে পাঠানো হয়, কিন্তু সেখানে তিন মাস বেকার থেকে শূন্য হাতে দেশে ফিরতে বাধ্য হই। দেশে ফিরে টাকা ফেরত চাইলে সার্বিয়ার ফ্লাইটের মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হয়, যা আর কখনো হয়নি। এখন আমি জমি-জায়গা হারিয়ে পথের ফকির। এনজিওর লোন ও আত্মীয়দের ধারের টাকা শোধ করতে না পারায় তারা মামলার হুমকি দিচ্ছে।”
জীবননাশের হুমকি ও অন্যান্য ভুক্তভোগীর হাহাকার
রবিউল জানান, এখন টাকা ফেরত চাইলে নাজমুল ও তার পরিবারের সদস্যরা সন্ত্রাসী ভাড়া করে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমার মতো কাশিমপুর গ্রামের গাফ্ফার ও জার্মান এবং সোনাদহ গোয়ালপাড়া গ্রামের নান্টুও একই প্রতারণার শিকার। এই চক্রের পাল্লায় পড়ে আজ অনেকে বিদেশের কারাগারে বন্দী। অনেককে রাশিয়ার সেনা ক্যাম্পে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে, কেউ কেউ ইউক্রেন যুদ্ধে জিম্মি হয়ে প্রাণ হারিয়েছে। বহু পরিবার জানেই না তাদের সন্তান আজ কোথায় আছে, কেমন আছে।”
সংবাদ সম্মেলনে রবিউল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, “প্রশাসনের সাহায্য ছাড়া আমার আর বেঁচে থাকার উপায় নেই।” তিনি অবিলম্বে প্রতারক চক্রের হোতাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা এবং তাদের আত্মসাৎ করা টাকা উদ্ধারের জন্য জোর দাবি জানান।