অনলাইন ডেস্কঃ টংক আন্দোলনের কিংবদন্তী সংগ্রামী নারী কুমুদিনী হাজংকে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় শেষ বিদায় দেওয়া হয়েছে। রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে নেত্রকোনার দুর্গাপুরের কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেরাতলী গ্রামের শ্মশানঘাটে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
শেষ কৃত্য সম্পন্নের আগে বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা কুমুদিনী হাজংয়ের মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
এর আগে, শনিবার (২৩ মার্চ) কুমুদিনী হাজং বহেরাতলী গ্রামের তার নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কুমুদিনী হাজং দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত শয্যাশায়ী ছিলেন। দেখভাল করেছেন মেঝ ছেলে অর্জুন হাজং ও তার স্ত্রী। টংক আন্দোলন নেত্রী রাশিমণি হাজং স্মৃতিসৌধ দেখতে গিয়ে সকলেই কুমুদিনী হাজংকে এক নজর দেখে আসতেন। শুনে আসতেন ব্রিটিশ বিরোধী টংক আন্দোলনের জন্য নিহত শহিদদের কথা, টং প্রথা বিলুপ্তির ইতিকথা।
জমিদারদের অন্যায্য খাজনা আদায়ের প্রতিবাদে ব্রিটিশ বিরোধী টংক আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছিল কুমুদিনী হাজংকে ঘিরেই। সেই সময় রাজ সেনার বিরুদ্ধে কৃষকদের বীরত্বপূর্ণ বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন তিনি।
টংক আন্দোলনের ইতিহাসের শেষ সাক্ষী কুমুদিনী হাজং শত বছর বেঁচে ছিলেন। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশে বিজয়পুর সীমান্তের একটি গ্রাম থেকে খাজনা প্রথা বিলুপ্তির আন্দোলনের গণজাগরণ হয়েছিল। এ আন্দোলনে ব্রিটিশদের গুলিতে নিহত রাশিমণি হাজংয়ের স্মৃতি ধরে রেখেছিলেন কুমুদিনি হাজং।
১৯৪৬ সালের কথা। কমরেড মণিসিংহ ভারত থেকে দুর্গাপুর মামার বাড়িতে চলে আসেন। শুরু করেন টংক প্রথা বা ধান কড়াড়ি খাজনা বাতিল আন্দোলন। আন্দোলনে যোগ দেন সীমন্তের কুল্লাগড়া ইউনিয়নের লঙ্কেশ্বর হাজং, রাশিমণি হাজংসহ আদিবাসীরা।
এরই জেরে সে বছরের ৩১ জানুয়ারি লঙ্কেশ্বর হাজংসহ বেশ কজন হাজং বিদ্রোহী নেতাকে ধরে নিতে ব্রিটিশ ফন্ট্রিয়ার পুলিশ আসে বহেরাতলী গ্রামে। তাদের না পেয়ে লঙ্কেশ্বর হাজংয়ের সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী কুমোদিনি হাজংকে তুলে নিয়ে যায়।
এ খবর এক কৃষক বিদ্রোহ সভায় রাশিমণি হাজংয়ের কাছে পৌঁছে। ছুটে যান তিনি। নারীকে নিয়ে যাওয়া মানে মান নিয়ে যাওয়া উল্লেখ করে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন। হাতে থাকা দা দিয়েই পুলিশর ওপর হামলা চালান। পরে পুলিশের বন্দুকের গুলিতে তিনিসহ দুজন হাজং নেতার প্রয়াণ ঘটে। তবে রক্ষা পান গৃহবধূ কুমুদিনি হাজং।