“নাই টেলিফোন, নাই রে পিয়ন, নাই রে টেলিগ্রাম” – গানের এই লাইনগুলো একদিন বাস্তব ছিল, কিন্তু প্রযুক্তির স্রোতে তা এখন কেবলই স্মৃতি। একসময় প্রিয়জনের চিঠির জন্য ডাকপিয়নের পথ চেয়ে থাকা নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মানুষের সেই অপেক্ষা ফুরিয়েছে। ডাকবাক্সগুলো থাকলেও তাতে আর আগের মতো ব্যক্তিগত চিঠি জমা হয় না।
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ডাকঘরের প্রয়োজনীয়তা প্রায় শূন্যের কোঠায়। হলদে খামে মোড়ানো আবেগঘন চিঠির জায়গা দখল করেছে ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ আর ইমেইল। ফলে উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী আত্রাই উপজেলার প্রধান ডাকঘরসহ ২৪টি শাখা ডাকঘরে এখন আর আগের প্রাণচাঞ্চল্য নেই। অনেক ডাকঘরের লাল বাক্সগুলো এখন ময়লা-আবর্জনার ঠিকানা, কিছু আবার পোস্টমাস্টারের বাড়িতেই সীমাবদ্ধ।
সিংসাড়া শাখা ডাকঘরের পোস্টমাস্টার মো. আব্দুল লতিফ জানান, “সপ্তাহে কিছু সরকারি চিঠি এলেও ব্যক্তিগত চিঠির খাম এখন আর খোলাই হয় না। মাত্র ৪,০০০ টাকা সম্মানীতে সংসার চলে না, তাই অন্য কাজও করতে হয়।”
প্রযুক্তির এই আগ্রাসন শুধু ডাকঘরের কার্যক্রমে নয়, আঘাত হেনেছে মানুষের আবেগের জগতেও। গীতিকার ও সাহিত্যিক সালেকুল ইসলাম বলেন, “প্রযুক্তি আমাদের আবেগ কেড়ে নিয়েছে। চিঠির সেই সুগন্ধ, সেই স্থায়িত্ব এখনকার এসএমএস বা মেসেজে পাওয়া যায় না। মায়ের অপেক্ষা বা প্রেয়সীর গোলাপসহ পাঠানো চিঠিগুলো এখন কেবলই গল্প।”
তবে বাস্তবতা মেনে নিয়েই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে ডাক বিভাগ। উপজেলা পোস্টমাস্টার মো. জালাল উদ্দিন জানান, একসময়ে যেখানে প্রতিদিন শত শত চিঠি আর লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেন হতো, সেখানে এখন ব্যক্তিগত চিঠি হাতে গোনা। তবে ডাক বিভাগকে ডিজিটাল করতে ‘নগদ’ সহ নানা প্রকল্প চালু হয়েছে। তিনি বলেন, “অনেকেই জানেন না যে, ডাকঘর এখন ডিজিটাল সেবা দিচ্ছে। মাত্র ৫ টাকায় ১ হাজার টাকা পাঠানো যায় এবং এখানে জীবন বীমার মতো সুবিধাও রয়েছে।”
ব্রিটিশ আমলে তৈরি আত্রাইয়ের প্রধান ডাকঘরের ভবনটি এখন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ডাক বিভাগকে নতুন করে সাজিয়ে তুলতে না পারলে, কালের সাক্ষী হয়ে থাকা এই সেবাটি অচিরেই ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেবে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।