জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক রূপান্তরের লক্ষ্যে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্ব ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই কমিশন সোমবার (২৮ জুলাই) খসড়াটি প্রকাশ করে। সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ এবং দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে আইনি ও কাঠামোগত সংস্কারের একটি বিস্তারিত পথনকশা এতে তুলে ধরা হয়েছে।
কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, “আমরা সনদের খসড়া কপিটি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছি, যাতে তারা এর ভাষা এবং প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করতে পারে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, তা সংলাপ শেষে চূড়ান্ত সনদে সংযোজন করা হবে।”
খসড়া সনদে বলা হয়েছে, এটি একটি বাধ্যতামূলক রোডম্যাপ, যা গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন নিশ্চিতকরণ এবং দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃত্ববাদ ও পদ্ধতিগত দুর্নীতির কবলে পড়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কারের লক্ষ্য নির্ধারণ করে।
খসড়া সনদের পটভূমি
সনদের পটভূমিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, তা দীর্ঘ ৫৩ বছরেও অর্জিত হয়নি। বিগত দেড় দশকে পূর্ববর্তী সরকার সংবিধান সংশোধন, নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন, নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসনকে দলীয়করণের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে একটি বিভীষিকাময় স্বৈরশাসনের দিকে ঠেলে দেয়।
এই পরিস্থিতিতে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সফল গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এই অভ্যুত্থান রাষ্ট্র সংস্কারের এক ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যার সদ্ব্যবহার করা সকলের পবিত্র দায়িত্ব।
কমিশন গঠন ও সংলাপ প্রক্রিয়া
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে ৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে ছয়টি পৃথক সংস্কার কমিশন (সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন) গঠন করে। এই কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য তৈরির জন্য ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করা হয়।
কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের মাধ্যমে সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে। মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত এবং ৪৪টি বৈঠকের আলোচনার ভিত্তিতে এই খসড়া সনদটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
বাস্তবায়নের অঙ্গীকার
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর শেষে একটি অঙ্গীকারনামা যুক্ত করা হয়েছে। এতে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিম্নোক্ত বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে:
১. সনদে উল্লেখিত সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান ও আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন বা নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে।
২. পরবর্তী নির্বাচিত সরকার গঠনের প্রথম দুই বছরের মধ্যে এই সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন ও টেকসই করা হবে।
৩. সনদের পূর্ণ বাস্তবায়নে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।
৪. ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সংবিধানে যথাযোগ্য স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
এই খসড়াটি এখন রাজনৈতিক দলগুলোর পর্যালোচনার অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সনদ প্রণয়ন করে তা জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।
Subscribe to Updates
Get the latest creative news from FooBar about art, design and business.
শিরোনাম
- ⭕ ফুয়াদ কাজী হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান আটক
- ⭕ পটুয়াখালীতে অবৈধভাবে খাল ভরাট : বিপাকে মৎস্যজীবীরা
- ⭕বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব নওগাঁ সদর শাখার উদ্যোগে ইফতার বিতরণ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
- ⭕ নেতিবাচক আচরণ করায় কাবা থেকে ৪ হাজার মুসল্লিকে গ্রেপ্তার
- ⭕বুয়েটের ঘটনা তদন্ত হচ্ছে : ওবায়দুল কাদের
- ⭕কম দামে গ্রাহককে গুণগত মাণসম্পন্ন পণ্য নিশ্চিত করতে হবে
- জাতীয়
রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা: ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশ


সর্বশেষ সংবাদ
দেশকাল টিভি -চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন,ধন্যবাদ।
জনপ্রিয় পোস্ট
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.deshkaltv.com কর্তৃক সংরক্ষিত