বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১৩

নওগাঁ জেলায় ইটভাটা বন্ধের প্রতিবাদে মানববন্ধন: জীবিকা ও পরিবেশের ভারসাম্যের আহ্বান

নওগাঁ জেলায় হঠাৎ ইটভাটা বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করেছেন ইটভাটা মালিক ও শ্রমিকরা। বুধবার সকালে জেলার নওগাঁ সদর,রাণীনগর, আত্রাই, ধামইরহাট ও নিয়ামতপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

ইটভাটা মালিক ও শ্রমিকরা জানান, হঠাৎ ভাটা বন্ধের ফলে হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এরা মূলত দিনমজুর, খেটে খাওয়া ও স্বল্প আয়ের শ্রেণির। তাদের দাবি, ভাটা বন্ধ থাকলে পরিবার, শিশুদের শিক্ষা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয় চালানো সম্ভব হবে না।

আত্রাইয়ের মানববন্ধনে শ্রমিক রাসেল বলেন, “আমরা সরকারের আইন মেনে চলতে চাই। তবে সব ভাটা একসাথে বন্ধ করলে আমরা বেকার হয়ে যাব। আমাদের জীবন বাঁচাতে বিকল্প ব্যবস্থা প্রয়োজন।”

নওগাঁ সদর,ধামইরহাট, আত্রাই, রাণীনগর ও নিয়ামতপুরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনের পর ইটভাটা মালিক ও শ্রমিকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত স্মারকলিপি জমা দেন। এতে তারা বৈধ কাগজপত্র থাকা ইটভাটাগুলো দ্রুত পুনরায় চালুর দাবি জানান।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, দেশের অধিকাংশ ইটভাটা এখনও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত হয়নি। এর ফলে কৃষিজমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে এবং ফসল উৎপাদনে ক্ষতি হচ্ছে। ইট পোড়ানোর জন্য প্রচুর কাঠ ও কয়লা ব্যবহার করা হয়, যা বন উজাড়, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, বায়ু দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়াচ্ছে। কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালি স্কুল, কলেজ ও বসতবাড়ির পরিবেশকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেন, “ধোঁয়ায় থাকা কার্বন মনোক্সাইড ও সালফার ডাই-অক্সাইড শ্বাসকষ্ট, চোখ ও ত্বকের সমস্যার কারণ হতে পারে। বন উজাড় করে যে ভাটাগুলো পরিচালিত হচ্ছে, সেগুলো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে শিল্প খাত চালু রাখার পথ খুঁজে বের করা জরুরি।”

পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী, ইটভাটা পরিচালনা করতে হলে পরিবেশগত ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। ভাটায় জিগজ্যাগ বা হাইব্রিড হফম্যান প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে, যা কম জ্বালানি খরচে কম ধোঁয়া উৎপন্ন করে। কৃষিজমি, নদী বা বনাঞ্চল সংলগ্ন স্থানে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। ভাটার চুল্লি থেকে নির্দিষ্ট উচ্চতার চিমনি স্থাপন করতে হবে যেন ধোঁয়া নিচু স্থানে ছড়াতে না পারে। ইট পোড়ানোর মৌসুম নির্ধারিত সময়ের বাইরে চালানো যাবে না। গাছ কাটার পরিবর্তে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারে উৎসাহিত হতে হবে।

প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাই না। তবে আইন না মেনে ভাটা পরিচালিত হলে তা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। নিয়ম মেনে যারা কাজ করবে, তাদের ভাটা চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে।”

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া মালিক ও শ্রমিকরা জানান, সরকার যদি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি স্থাপনে সহায়তা দেয় এবং শ্রমিকদের বিকল্প আয়ের সুযোগ নিশ্চিত করে, তাহলে একদিকে পরিবেশ রক্ষা হবে, অন্যদিকে জীবিকা টিকবে। একজন মালিক বলেন, “আমরা পরিবেশ রক্ষা করতে চাই। তবে নতুন প্রযুক্তিতে ভাটা রূপান্তরে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। এতে শ্রমিকদের কাজও থাকবে, পরিবেশও ভালো থাকবে।”

পরিবেশের ভারসাম্য ও হাজারো শ্রমিকের জীবিকার মধ্যে সমন্বয় করে টেকসই সমাধান বের করাই একমাত্র পথ। সরকারের, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ইটভাটা মালিকদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সম্ভব “সবুজ ও দায়িত্বশীল ইটভাটা খাত” গড়ে তোলা।

দেশকাল টিভি -চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন,ধন্যবাদ।

জনপ্রিয় পোস্ট

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.deshkaltv.com কর্তৃক সংরক্ষিত

Exit mobile version