নওগাঁর রাণীনগরের মালশন গিরিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছা. ময়না খাতুনের বিরুদ্ধে জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদে চাকরি করার অভিযোগ উঠার পর তদন্ত শুরু করেছে শিক্ষা কর্মকর্তা। ওই শিক্ষিকার শিক্ষক নিবন্ধন সনদসহ সকল কাগজপত্র উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা দিতে চিঠি করা হয়। কিন্তু চিঠির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি তার কাগজপত্র জমা না দিয়ে সময়ের জন্য আবেদন করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে রবিবার পর্যন্ত ওই শিক্ষিকাকে সময়ও দিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা।
ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০০৭ সালের পাশ করা একটি শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিয়ে তিনি বাংলা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হিসাবে মালশন গিরিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরিতে নিয়োগ নিয়েছেন। এনটিআরসিএ এর ওয়েবসাইটে সেই সনদের রোল নাম্বার দিলে সনদধারীর কোন তথ্য আসে না। শুধুমাত্র ওই সনদের তথ্যই আসে। এরপর জেলা শিক্ষা অফিসে ওই রোল নম্বরধারীর কোন তথ্য জেলা শিক্ষা অফিসের রেজিস্ট্রারে পাওয়া যায়নি। তিনি ওই বিদ্যালয়ে গত ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর বাংলা বিষয়ের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ নেন। এরপর তিনি ২০১১ সালের ১ মে বি.এডসহ এমপিওভুক্ত হন।
জানা গেছে, সম্প্রতি শিক্ষিকা ময়না খাতুনের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে শিক্ষা কর্মকর্তাগণ। শুরু হয় ওই শিক্ষিকার শিক্ষক নিবন্ধন সনদের যাচাই প্রক্রিয়া। গত বৃহস্পতিবার ওই শিক্ষিকা ও তার বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কাছে চিঠি প্রেরণ করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। সেই চিঠিতে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) এর মধ্যে তার সকল কাগজপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই সময় শেষ হওয়ার আগেই রবিবার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে প্রথমে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু শিক্ষা কর্মকর্তা কোনভাবে পাত্তা না দেওয়ায় তিনি সময় চেয়ে আবেদন করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, তার এই সময়ের আবেদন করায় আমাদের মনে নতুনভাবে সংশয় দেখা দিয়েছে। যেখানে তিনি নিজেই অফিসে গেলেন সেখানে তিনি তার কাগজপত্র জমা দিতে পারতেন। তার সনদ যদি সঠিক হবে, তাহলে তিনি কেন তার সনদের কপি জমা না দিয়ে সময়ের আবেদন করলেন? কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা দাবি জানায় দ্রুত তার সনদটি যাচাইয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষিকা মোছা. ময়না খাতুন বলেন, আমি সময়ের আবেদন দিয়েছি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আগামী রবিবার পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে আমার কাগজপত্র জমা দিয়ে দিবো।
রাণীনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই শিক্ষিকার শিক্ষক নিবন্ধন সনদসহ অন্যান্য সকল কাগজপত্র জমা দিতে বলেছি। কিন্তু তিনি তার কাগজপত্র না নিয়েই আমার অফিসে আসে। সেখানে তিনি নতুন করে আবারও সময়ের আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং আগামী রবিবার পর্যন্ত তাকে সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনি কাগজপত্র জমা না দিলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।